শামীমুর রেজা ও তামান্না খাতুন বাক্প্রতিবন্ধী। তাঁরা ২০২১ সালে ভালোবেসে বিয়ে করছেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
বাক্প্রতিবন্ধী শামীমুর রেজা ও তামান্না খাতুন দম্পতি। সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সদুল্যাহপুর গ্রাম
বাক্প্রতিবন্ধী শামীমুর রেজা ও তামান্না খাতুন দম্পতি। সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সদুল্যাহপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো
শামীমুর রেজা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরি করেন। বাক্প্রতিবন্ধী এই যুবক সামান্য বেতনে ঠিকমতো চলতে পারেন না। দুই বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন আরেক বাক্প্রতিবন্ধী তামান্না খাতুনকে। ছোট্ট একটি ঘরেই তাঁদের সংসার। বিয়ের পর সংসারে অভাব বেড়েছে। টাকার অভাবে অনেক ইচ্ছাই পূরণ করতে পারেন না। ডাল-ভাত খেয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। কিন্তু আর্থিক অনটন তাঁদের ভালোবাসায় এতটুকুও চিড় ধরাতে পারেনি।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পূর্ব চর্বনী গ্রামের ছেলে শামীমুর রেজা ওরফে সৌরভ (২৯)। পড়াশোনা করেছেন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সদুল্যাহপুর গ্রামের মেয়ে তামান্না খাতুন (২৩)। পড়াশোনা করেছেন বাঘারপাড়া মহিলা কলেজে। সেখান থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।
সম্প্রতি শামীমুর রেজা-তামান্না খাতুন দম্পতি বাঘারপাড়া উপজেলার সদুল্ল্যাহপুর গ্রামে তামান্নার মামবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা লিখে তাঁদের আবেগ-ভালোবাসার গল্প বলেন।
তামান্না-সৌরভের পরিচয়ের গল্পটা চমৎকার। ২০২১ সালের ১৫ মে মুঠোফোনে ফেসবুক দেখছিলেন শামীমুর রেজা। হঠাৎ তামান্না খাতুনের আইডি তাঁর সামনে আসে। দেরি না করে তিনি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান তামান্নাকে। কিছু সময় পর তাঁর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করেন তামান্না।
একপর্যায়ে জানতে পারেন, তাঁরা বাক্প্রতিবন্ধী। এর পর থেকে নিয়মিত ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে ইশারায় তাঁদের কথা চলত। পরিচয়ের দুই মাসের মাথায় তাঁদের প্রেম হয়। একপর্যায়ে তাঁরা বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা দুই পরিবারকে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানান। কিন্তু তাঁদের পরিবার প্রথমে বিয়েতে রাজি হয়নি।
কিন্তু দুজন তাঁদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। দুই পরিবারকে বোঝাতে থাকেন। অবশেষে দুই পরিবার তাঁদের বিয়েতে সম্মতি দেয়। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার সদুল্যাহপুর গ্রামে তামান্নার মামবাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তাঁরা চলে আসেন গাজীপুরে। সেখানে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া করে থাকেন তাঁরা। শামীমুর রেজা গাজীপুরে কেয়া কসমেটিক লিমিটেডে চাকরি করেন। তামান্না খাতুন গৃহবধূ। বাড়িতে রান্নাবান্না, ঘর-গৃহস্থালির কাজ করেন তিনি। তাঁকে সহায়তা করেন শামীমুর রেজা সৌরভ। তামান্না এখন অন্তঃসত্ত্বা। অনাগত সন্তানকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই এই দম্পতির।
Leave a Reply